আমরা অনেকেই ধাতু কাকে বলে | ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ নিয়ে ভালো করে বলতে পারি না। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরির পরিক্ষায় এখান থেকে প্রশ্ন আস্তে দেখা যায়। তাই তোমাদের চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আজকের আয়োজন। চলো তাহলে শুরু করা যাক…
ধাতু কাকে বলে | ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ
ধাতু বা ক্রিয়ামূল: ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ধাতু কী? এ প্রশ্নের উত্তরে সহজভাবে বলতে পারি, ধাতু ক্রিয়ার মূল অংশ । তাই এটাকে ক্রিয়ামূলও বলা হয় ।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “ক্রিয়ার মূল অর্থ যাহাতে নিহিত, যাহার দ্বারা ক্রিয়ার ভাবটি প্রতিপাদিত হয় তাহাকে বলে ক্রিয়ার ধাতু (verb root) কোনো ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে বা ভাঙতে থাকলে, একপর্যায়ে এমন একটি মূল বা অংশে উপনীত হওয়া যায়, যাকে আর বিশ্লেষণ বা ভাগ করা সম্ভব নয় এবং যার দ্বারা ক্রিয়াপদের অন্তর্নিহিত অর্থ বা ভাবটি প্রকাশ পায় । ক্রিয়াপদের ওই অবিভাজ্য মূলকে সে ক্রিয়ার ধাতু বলা হয় যেমন- কর, ধর, পড়, বল, ফল, যা, খা, পা, দেখ, দে ইত্যাদি

ধাতু কাকে বলে বা ধাতু কি বা মূদ্রা ধাতু কাকে বলে
ক্রিয়াপদের মূল অংশকে ধাতু বলা হয়। এককথায় বলা যায়, ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি বাদ দিলে যা থাকে তাই ধাতু। যেমন করা, ধরা, পড়া, বলা, চলা প্রভৃতি ক্রিয়াপদের মূল যথাক্রমে- কর, ধর, পড়, বল, চল
ধাতু বা ক্রিয়ামূল চিহ্নিত করার উপায় ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ সৃষ্টি করা হয় এবং এই ক্রিয়াপদই বাক্যে ব্যবহৃত হয়। প্রচলিত ও সাধারণভাবে বহুল পরিচিত কিছু ধাতু বা ক্রিয়ামূল চিহ্নিত করার প্রধান উপায় হলো ।
বর্তমান কালের অনুজ্ঞার তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ চিহ্নিত করা এই রূপ আর ধাতুরূপ অভিন্ন বলে এটি চিহ্নিত করা গেলে ধাতু বা ক্রিয়ামূল চিহ্নিত হয়ে যায়। যেমন— (তুই) কর্, খা, যা, ডাক, দেখ, লেখ ইত্যাদি । এগুলো যেমন ধাতু তেমনই মধ্যমপুরুষের তুচ্ছার্থক বর্তমান কালের অনুজ্ঞার ক্রিয়াপদও ধাতু : ক্রিয়ার মূল অংশকে ধাতু বলে। ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটি অংশ পাওয়া যায়
১. ধাতু বা ক্রিয়ামূল কর, ধর, পড়, যা, খা, পা, দেখ, দে ইত্যাদি ২. ক্রিয়া-বিভক্তি আ, ই, ছি, ছে, যে, তে, লে. লাম ইত্যাদি
ধাতুর শ্রেণিবিভাগ
ধাতু তিন প্রকার । যথা-
১. মৌলিক ধাতু
২. সাধিত ধাতু
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
১. মৌলিক ধাতু : যেসব ধাতু বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় এবং বিশ্লেষণ করলে ভাষায় ওই বিশ্লেষিত বা ভগ্নাংশের কোনো অর্থ সেগুলোই মৌলিক ধাতু। মৌলিক ধাতু সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতু নামেও পরিচিত। যেমন- চল, পড়, কর, শো, হ, খা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু ।
মৌলিক ধাতুর শ্রেণিবিভাগ : বাংলা ভাষায় উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা
- ক. সংস্কৃত ধাতু
- খ। বাংলা ধাতু ও
- গ. বিদেশাগত ধাতু।
ক. সংস্কৃত ধাতু তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতুকে সংস্কৃত ধাতু বলে । অর্থাৎ যেসব ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সরাসরি বা সোজাসুজি বাংলা ভাষায় এসেছে সেগুলো সংস্কৃত ধাতু। যেমন- কৃ, গম, ধু, পঠ, স্থা ইত্যাদি ।
খ. বাংলা ধাতু যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সরাসরি বা সোজাসুজি আসেনি বরং প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে।
বাংলা ভাষায় এসেছে সেগুলো বাংলা ধাতু। যেমন- কাট, ফাঁদ, জান, নাচ্ ইত্যাদি। উদাহরণ : আঁক্ + আ = আঁকা। কী সব আঁকাআঁকি করছ? দেখ + আ = দেখা । বেশি সিনেমা দেখা ভালো নয় ।
গ। বিদেশি ধাতু : বিদেশি ভাষা থেকে আগত যেসব ধাতু বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় তাদের বিদেশি বা বিদেশাগত ধাতু বলে । প্রধানত হিন্দি এবং কয়েকটি আরবি-ফারসি ভাষা থেকে আগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে। তাদের বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলে। যেমন— ভিক্ষে মেগে খায়, এ বাক্যে ‘মাগ’ ধাতু হিন্দি ‘মা’ থেকে আগত।
আরও কয়েকটি উদাহরণ : খাট + বে = খাটবে । যত বেশি খাটবে ততই সুফল পাবে। জন্ম + আট = জমাট অন্ধকার বেশ জমাট বেঁধেছে।
ধাতু থেকে প্রশ্ন ও উত্তর
- ১. ক্রিয়াপদের মূল অংশকে কী বলে?
- ক. বিভক্তি খ. শব্দ
- গ. ধাতু ঘ. পদ
- ২. ‘ধাতু’ শব্দটির যথার্থ পরিচয় কোনটি?
- ক. পদের প্রধান অংশ
- খ. বাক্যের অবিভাজ্য অংশ
- গ. ক্রিয়ার মূল অংশ
- ঘ. ধ্বনির ক্ষুদ্রতম অংশ
- ৩. বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতু কত প্রকার?
- ক. দুই খ. তিন
- গ. চার ঘ. পাঁচ
- ৪. ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে কয়টি অংশ পাওয়া যায়?
- ক. ২টি খ. ৩টি
- গ. ৪টি ঘ. ৫টি
- ৫. বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বনাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ধাতু যোগে গঠিত হয় কোন ধাতু?
- ক. নামধাতু খ . কর্মবাচ্যের ধাতু
- গ. প্রযোজক ধাতু ঘ. সংযোগমূলক ধাতু
- ৬. সাধিত ধাতু কত প্রকার?
- ক. ২ প্রকার খ. ৩ প্রকার গ. ৪ প্রকার ঘ. ৫ প্রকার
- ৭. ধাতুর শেষে কী যুক্ত হলে তা ক্রিয়াপদ হয়?
- ক. উপসর্গ খ. অনুসর্গ
- গ. প্রত্যয় ঘ. বিভক্তি
- ৮. ধাতু কত প্রকার?
- ক. ২ প্রকার খ.৩ প্রকার গ. ৪ প্রকার ঘ. ৫ প্রকার
- ৯. ক্রিয়া প্রকৃতির অন্য নাম কী?
- ক. ধাতু খ. উপসর্গ
- গ. অনুসর্গ ঘ. প্রত্যয়
- ১০. কোন ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না?
- ক. সাধিত ধাতু খ. সিদ্ধ ধাতু
- গ. যৌগিক ধাতু ঘ. কর্মবাচ্যের ধাতু
- ১১. বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে ‘অ’ প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে কী বলে?
- ক. সাধিত ধাতু খ. যৌগিক ধাতু
- গ. নাম ধাতু ঘ. কর্মবাচ্যের ধাতু
- ১২. বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত হয় কোন ধাতু?
- ক. সাধিত ধাতু খ. প্রযোজক ধাতু
- গ. নাম ধাতু ঘ. কর্মবাচ্যের ধাতু
- ১৩. মৌলিক ধাতু বা নাম শব্দের পরে আ-প্রত্যয় যোগে কোন ধাতু গঠিত হয়?
- ক. যৌগিক ধাতু খ. প্রযোজক ধাতু
- গ. কর্মবাচ্যের ধাতু ঘ. সাধিত ধাতু
- ১৪. ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়, কী কী?
- ক. মৌলিক ধাতু ও সিদ্ধ ধাতু
- খ. ক্রিয়ামূল ও ক্রিয়া-বিভক্তি
- গ. গম্ ও গঠ্ ধাতু
- ঘ. স্বয়ংসিদ্ধ ও মৌলিক ধাতু
- ১৫. বাংলা ধাতুর উদাহরণ কোনটি?
- ক. খাট্ + বে = খাটবে
- খ. জম্ + আট = জমাট
- গ. হাস্ + ই = হাসি
- ঘ. বিগড় + আনো = বিগড়ানো
সঠিক উত্তর
ধাতু: ১. গ ২. গ ৩. খ ৪.ক ৫. ঘ ৬. খ ৭. ঘ ৮. খ ৯. ক ১০. খ ১১. গ ১২. গ ১৩. ঘ ১৪. খ ১৫. গ
সর্বশেষ কথা হচ্ছে যে, ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এবং তা লক্ষ্য নির্ধারন করে করতে হবে। আজকে উপরে আমরা ধাতু কাকে বলে | ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সংজ্ঞা, ধারণা ও প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করি আজকের আলোচনা আপনার ধাতু সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে।
আজকের টপিক ধাতু রিলেটেড প্রশ্নঃ ধাতু কি বাংলা, ধাতু কোনগুলো, ধাতু উদাহরণ, ধাতু কয় প্রকার, ধাতু বাংলা ব্যাকরণ, ধাতু নির্ণয়, নাম ধাতু, ধাতু ও অধাতু, মুদ্রা ধাতু কাকে বলে, সংস্কৃত ধাতু রূপ, ধাতু ক্ষয়, ধাতু কি, ধাতু ক্ষয় রোগের হোমিও চিকিৎসা, ধাতু ক্ষয় রোগের চিকিৎসা, অভ্র ধাতু, ধাতু ক্ষয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, ধাতু নিষ্কাশন একটি বিজারণ প্রক্রিয়া, ধাতু ক্ষয় রোগের হামদর্দ ঔষধ ।