সারমর্ম বাংলা ২য় পত্র | সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য

সারমর্ম বাংলা ২য় পত্র | সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য

সারমর্ম বাংলা ২য় পত্র | সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য: সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ আপডেট চাকরি সাইটে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমরা আরেকটি নতুন টপিক নিয়ে আসছি। নিম্নে আমরা সারমর্ম বাংলা ২য় পত্র | সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করছি। নিম্নে বিস্তারিত ফদেখুন…

সারমর্ম বাংলা ২য় পত্র | সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারাংশ লেখার উদ্দেশ্য

সারমর্ম ও সারাংশ লিখন
গদ্য বা পদ্য রচনার কোনো না কোনো অন্তর্নিহিত মূল ভাব থাকে। সহজ ও সাবলীল ভাষায় সংক্ষেপে তা লেখার নাম সারমর্ম বা সারাংশ। সাধারণত গদ্যের ভাব-সংক্ষেপণ বোঝাতে সারাংশ ও পদ্যের ভাব সংক্ষেপণ বোঝাতে সারমর্ম কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সারমর্ম/ সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা

সারমর্ম কিংবা সারাংশ লেখার দক্ষতা অর্জন করতে হলে নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। চর্চা যত বেশি হয় ততই শিক্ষার্থীর পক্ষে রচনার মূল ভাববস্তু উপলব্ধির ক্ষমতা ও রচনা-নৈপুণ্য বাড়ে। সারমর্ম/সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখা দরকার :


১. গঠন : সারমর্ম বা সারাংশ লিখতে গেলে অনুচ্ছেদের তথ্য লিখলে চলে না, মূল ভাব বুঝে নিয়ে তাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়। তাই প্রথমেই মূল ভাব বোঝার জন্য রচনাটি ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়া দরকার।


২. মূল ভাব সন্ধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিহ্নিতকরণ : প্রদত্ত রচনাংশে সাধারণত একটি মূল ভাব বা বক্তব্য থাকে। কখনো কখনো একাধিক মূল ভাব বা বক্তব্যও থাকতে পারে। তা উপলব্ধি করতে পারলে সারমর্ম ও সারাংশ লেখা সহজ হয়। মূল ভাব খুঁজে নেওয়ার একটা ভালো উপায় হচ্ছে, যেসব বাক্য বা বাক্যাংশ মূল ভাবের দ্যোতক বলে মনে হয় সেগুলো চিহ্নিত করা।


৩. বাহুল্য বর্জন : অপ্রয়োজনীয় অংশ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ আলাদা করার মাধ্যমে সহজে মূল ভাব বের করা যায়। এজন্যে মূল রচনাংশে ব্যবহৃত উদ্ধৃতি, বর্ণনা, সংলাপ, উদাহরণ, অলংকার (উপমা-রূপক) ইত্যাদি বাদ দিতে হয়।


৪. ভিন্নতর প্রসঙ্গের অবতারণা না করা : সারমর্ম কিংবা সারাংশ অবশ্যই মূল রচনার ভাবধারণার মধ্যে সীমিত থাকে। তাই মূল ভাবের বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তিগত মতামত বা মন্তব্য সারমর্মে /সারাংশে প্রকাশ করা চলে না ।
সারমর্ম/সারাংশ রচনার কৌশল


ক. অনুচ্ছেদ : সারমর্ম কিংবা সারাংশ একটি অনুচ্ছেদে লেখা উচিত।
খ. প্রারম্ভিক বাক্য : প্রারম্ভিক বাক্য যথাসম্ভব সংহত ও আকর্ষণীয় হওয়া চাই। এতে পাঠক বা পরীক্ষক শুরুতেই চমৎকৃত হন।
গ. প্রসঙ্গ বাক্য : প্রসঙ্গ বাক্য (মূল ভাবটুকু প্রকাশের চুম্বক বাক্য) সারমর্ম / সারাংশের প্রথমে থাকলে ভালো। তা প্রয়োজনে মধ্যে কিংবা শেষেও থাকতে পারে।
ঘ. প্রত্যক্ষ উক্তি : মূলে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরোক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়। ও পুরুষ : সারমর্মে /সারাংশে উত্তম পুরুষে (আমি, আমরা) বা মধ্যম পুরুষে (তুমি, তোমরা) লেখা চলে না।
বক্তব্য বিষয় যথাসম্ভব নৈর্ব্যক্তিকভাবে লিখতে হয়।
চ. উদ্ধৃতি মূলে কোনো উদ্ধৃতাংশ থাকলে সারমর্মে উদ্ধৃতিচিহ্ন বর্জিত হবে এবং সংক্ষিপ্ত ও সংহতরূপে তা প্রকাশ করতে হবে।
ছ. ভাষা : সারমর্ম ও সারাংশের ভাষা সরল ও সাবলীল হওয়া দরকার। তাই জটিল বাক্যের পরিবর্তে সরল বাক্য এবং দুরূহ শব্দের পরিবর্তে সহজ-সরল শব্দ ব্যবহার করা উচিত।
জ. হুবহু উদ্ধৃতি বা অনুকৃতি : মূলের কোনো অংশের হুবহু উদ্ধৃতি বা অনুকৃতি সারমর্ম/সারাংশে গ্ৰহণীয় নয়। মূলের কোনো অংশকে সামান্য অদল-বদল করে লিখে দেওয়াও অনুচিত।
ঝ পরিসর সারমর্ম / সারাংশ কত বড় বা ছোট হবে তা নির্ভর করে প্রদত্ত অংশে বর্ণিত বিষয়ের গুরুত্ব ও গভীরতার ওপর। প্রদত্ত রচনার ভাববস্তু সুসংহত ও নিরেটভাবে প্রকাশিত হলে তা সংক্ষেপ করা কঠিন। হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সারমর্ম/সারাংশ মূলের সমান, অর্ধেক, এক- -তৃতীয়াংশ বা তার কমও হতে পারে।
ঞ. খসড়া : সারমর্ম কিংবা সারাংশ লেখার সময়ে প্রথমে প্রদত্ত রচনার মূল ভাবটুকুর আলোকে একটি প্রাথমিক খসড়া দাঁড় করানো ভালো। তারপর প্রয়োজনমতো পরিমার্জনা করে পুনর্লিখন করে নিতে হয়।

সারমর্ম/সারাংশের নমুনা

১। কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়েঘরে।


সারমর্ম : স্বর্গ ও নরক কেবল সুদূর পরলোকের ব্যাপার নয়। ইহলোকেও এদের অস্তিত্ব রয়েছে। বিবেকহীন মানুষের অপকর্ম ও নিষ্ঠুরতার বিস্তার ঘটলে জগৎ হয়ে ওঠে নরকতুল্য। আর মানুষে মানুষে সম্প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ে উঠলে জগৎ হয়ে ওঠে স্বর্গীয় সুষমাময়।


২। তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর,
ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর।
বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙে লয়,
তরু তবু অকাতর কিছু নাহি কয়।
দুর্লভ মানবজন্ম পেয়েছ যখন,
তরুর আদর্শ কর জীবনে গ্রহণ।
পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন,
তুমিও হও গো ধন্য তরুর মতোন।


সারমর্ম : গাছপালা ছায়া দিয়ে, ফল দিয়ে, শাখা দিয়ে মানুষের উপকার করে। পরের সেবা করেই বৃক্ষের জীবন ধন্য। মানুষেরও উচিত বৃক্ষের পরোপকারের আদর্শকে জীবনে অনুসরণ করা। তাহলেই মানবজীবন ধন্য ও সার্থক হবে।


৩। কে তুমি খুঁজিছ জগদীশে ভাই আকাশ-পাতাল জুড়ে
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ, বুকের মানিক বুকে ধরে তুমি খোঁজো তারে দেশ-দেশ,
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে, তুমি আছ চোখ বুজে,
স্রষ্টার খোজে আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে।
ইচ্ছা অন্ধ। আঁখি খোলো,
দেখ দর্পণে নিজ কায়া, সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার,
সকলের মাঝে তিনি,
আমারে দেখিয়া আমার অজানা জন্মদাতারে চিনি।


সারমর্ম : সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অবস্থান। নিজেকে চিনে সৃষ্টির সেবাতে আত্মনিয়োগ করে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করা যায়। বৈরাগ্য সাধনা করে তাকে পাওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *